বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাউবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম এ মাননানের ছেলে জাহেদ মাননান। বাউবিতে সহকারী অধ্যাপক পদে আবেদন করলে নির্ধারিত যোগ্যতা না থাকায় বাতিল হয় তার আবেদন। কিন্তু বছরখানেক পর জাহেদ বাগিয়ে নিয়েছেন ওপেন স্কুলে সহযোগী অধ্যাপকের চাকরি! এমন অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন উপাচার্য পিতা অধ্যাপক ড. এম এ মাননান। ছেলেকে নিয়োগ দিতে তিনি দফায় দফায় সংশোধন করেছেন নিয়োগবিধি, শিথিল করেছেন যোগ্যতা।
সূত্রমতে, বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব বিজনেসে সহকারী অধ্যাপক পদে নিয়োগ পেতে ২০১৬ সালের ২৫ অক্টোবর আবেদন করেন জাহেদ মাননান। বাউবির নিয়োগ বিধিমালা, ২০১২ মতে, সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগের জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতার কোনো পর্যায়ে গ্রেডিং পদ্ধতিতে সিজিপিএ ৩ দশমিক ২০ (৪.০-এর মধ্যে)-এর কম থাকবে না।
জাহেদ মাননানের ফলাফলে সম্মানে (বিবিএ) ৩ দশমিক ১৯ পয়েন্ট থাকায় নিয়োগের শর্ত পূরণ না হওয়ায় তাকে বাদ দেওয়া হয় নিয়োগ প্রক্রিয়া থেকে। এ ছাড়া সহযোগী অধ্যাপক পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন সিজিপিএ ৩ দশমিক ২০ পয়েন্টের পাশাপাশি উচ্চতর ডিগ্রিসহ আন্তর্জাতিকমানের গবেষণা প্রকাশনারও বাধ্যবাধকতা ছিল। উপাচার্যের ছেলে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় বাদ পড়ার পর ২০১৭ সালে নিয়োগবিধি সংশোধন করেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সংশোধিত বিধিতে, শিক্ষাগত যোগ্যতা কমিয়ে ন্যূনতম সিজিপিএ নির্ধারণ করা হয় ২ দশমিক ৫০ পয়েন্ট। উপাচার্যের ছেলেকে নিয়োগ দিতে এক লাফে যোগ্যতা কমানো হয়েছে শূন্য দশমিক ৭০ পয়েন্ট। জাহেদ মাননানের উচ্চতর যোগ্যতা না থাকায় সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে তাকে নিয়োগের ক্ষেত্রে বিজ্ঞপ্তিতে উচ্চতর ডিগ্রি যোগ্যতাও শিথিল করা হয়। এমন ডিগ্রিকে অতিরিক্ত যোগ্যতা বলে উল্লেখ করা হয় বিজ্ঞপ্তিতে।
যোগ্যতা শিথিলের পরও শিক্ষকতার প্রয়োজনীয় অভিজ্ঞতা না থাকায় এবারও আবেদন করতে পারেননি ভিসিপুত্র জাহেদ মাননান। কারণ, নিয়োগবিধিতে চাকরির অভিজ্ঞতায় সক্রিয় চাকরিকাল বলতে সকল প্রকার শিক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ ও স্ববেতনে ছুটি এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানে স্ববেতনে চাকরিকাল চাকরির অর্ধেক ধরার কথা বলা ছিল। এবার জাহেদ মাননানের চাকরির অভিজ্ঞতা বাড়াতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব গভর্নরসে (বিওজি) সক্রিয় কার্যকাল গণনার নতুন ‘তত্ত্ব’ নির্ধারণ করা হয়! সংশোধিত বিধিমালায়, স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয়ে পার্টটাইম (অ্যাডজাঙ্ক্ট) শিক্ষকতাকে চাকরিকাল হিসেবে গণনার সিদ্ধান্ত নেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অধ্যাপক বলেন, একজন শিক্ষক নিজ চাকরির পাশাপাশি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যাডজাঙ্ক্ট হিসেবে পাঠদান করতে পারেন। কিন্তু এটাকে সক্রিয় চাকরিকাল বা চাকরির জন্য অভিজ্ঞতা হিসেবে দেখাতে পারেন না। এমনটা করা বেআইনি। বর্তমান উপাচার্যের এমন একনায়কতান্ত্রিক আচরণ মেনে নেওয়া যায় না বলেও মত ওই অধ্যাপকের। নিয়ম অনুযায়ী বিওজি অনুমোদিত শিক্ষক নিয়োগের যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা ও অন্য শর্তাবলিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের স্বাক্ষর থাকার কথা থাকলেও সেখানে স্বাক্ষর করেছেন স্বয়ং উপাচার্য এম এ মাননান।
অনুসন্ধানে জানা যায়, নিজের ছেলেকে নিয়োগ দিতে মনমতো নীতিমালা করতে বিওজির কাছে অনুরোধ করে নিয়োগ নীতিমালা সংশোধনের ক্ষমতা নেন উপাচার্য স্বয়ং। নিয়োগের ‘অযোগ্য’ ছেলেকে নিয়োগের জন্য দফায় দফায় নীতিমালা, বিধিমালা সংশোধন করে যোগ্য করে তোলার পর এবার জাহেদকে নিয়োগের জন্য বৃদ্ধি করা হয় আবেদনের তারিখ। ফলাফলে, কোনো উচ্চতর ডিগ্রি ছাড়া পার্টটাইম বা অ্যাডজাঙ্ক্ট শিক্ষকতা ব্যবহার করে সহযোগী শিক্ষকের পদে চাকরি বাগিয়ে নিয়েছেন জাহেদ মাননান। উপাচার্য মাননান দ্বিতীয় দফায় নিয়োগ পাওয়ার পর তিনি বিভিন্ন নিয়োগ নীতিমালা সংশোধন করে আত্মীয়দের নিয়োগ পাইয়ে দিয়েছেন বলেও বিভিন্ন মাধ্যমে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, আজরা বেগম নামে ৩৮ বছর বয়সী শ্যালিকাকে বয়স ও শর্ত শিথিল করে চাকরি দিয়েছেন উপাচার্য। একইভাবে নিয়োগ দিয়েছেন কামরুল ইসলাম নামে আরেক আত্মীয়কে। ভিসি মাননান এখন তার এক মেয়ে ও আরেক ছেলেকে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ দেওয়ার জন্য আদাজল খেয়ে নেমেছেন বলে জানা গেছে। উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম এ মাননানের কাছে ছেলে নিয়োগ দিতে যোগ্যতা শিথিল করা ও বিধি সংশোধনের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। সূত্রঃ বাংলাদেশ প্রতদিন ।